কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার শ্রীরায়েরচর সিরাজুল ইসলাম মেমোরিয়াল উচ্চবিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি, কর্মচারী নিয়োগ আটকে রেখেছে । এমন তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের বিভিন্ন এলাকায়। খোজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছরের ৫ অক্টোবর গণমাধ্যমে অত্র বিদ্যালয়ের কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বিদ্যালয়ের পরিচ্ছন্ন কর্মী পদে একজন, অফিস সহায়ক পদে একজন ও আয়া পদে একজন করে তিনটি পদের জন্য, অষ্টম শ্রেণী পাস আগ্রহী ব্যক্তিদেরকে প্রধান শিক্ষক বরাবর লিখিত আবেদন করার অনুরোধ জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী উল্লেখিত তিনটি পদে চাকরি করতে পরিচ্ছন্ন কর্মী পদে তিনজন, অফিস সহায়ক পদে পাঁচজন ও আয়া পদে চারজন আগ্রহী ব্যক্তি আবেদন করেন।
কর্মচারী নিয়োগের প্রক্রিয়া অনুযায়ী, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, দাউদকান্দি আমেনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, অত্র বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও একজন অভিভাবক সদস্য সহ পাঁচ সদস্যের নিয়োগ কমিটি গঠন করা হয়। ৩ নভেম্বর নিয়োগ কমিটির ২ নং সদস্যের প্রতিনিধি আমানুল্লাহ ও নিয়োগ কমিটির অন্য চারজন সহ মোট পাঁচজন সদস্য আগ্রহী ব্যক্তিদের ৩০ নাম্বারের লিখিত পরীক্ষা ও ৫ নাম্বারের ভাইভা নেন।
পরীক্ষা শেষে সেদিন বিকেলেই ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও নিয়োগ কমিটির সদস্য মোঃ কামরুজ্জামান, সুষ্ঠু পরিবেশে সফলভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পারায়, বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশের দোতলা ভবনে দাঁড়িয়ে কয়েক শতাধিক লোকের উপস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তাহার বক্তব্যের পর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তিনটি পদে সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে উত্তীর্ণ হওয়া ব্যক্তিদের নাম ঘোষণা করেন।
ঘোষণা হওয়া ফলাফল অনুযায়ী পরিচ্ছন্ন কর্মী পদে শাহাবুদ্দিন মিয়া, অফিস সহায়ক পদে রিমন মিয়া ও আয়া পদে শান্তা বেগম উত্তীর্ণ হয়।নিয়োগ পরীক্ষার দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও ম্যানেজিং কমিটি উত্তীর্ণ ব্যক্তিদের কে নিয়োগ দেয়নি। ২০ নভেম্বর রবিবার কমিটির সভাপতি মোঃকামরুজ্জামানের সভাপতিত্বে এ বিষয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ম্যানেজিং কমিটির একাধিক সদস্য, উত্তীর্ণ চাকরি প্রার্থীদেরকে নিয়োগ দিতে সভাপতির প্রতি অনুরোধ জানান।
এসময় পরিচ্ছন্ন কর্মী পদে শাহাবুদ্দিন মিয়াকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি চুড়ান্ত হয় এবং বাকি দুই পদে উত্তীর্ণ ব্যক্তিদের নিয়োগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পুনরায় আবারো বিজ্ঞপ্তি দিয়ে চাকরীতে আগ্রহী ব্যক্তিদের নতুন করে পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার কথা জানান একাধিক অভিভাবক সদস্য ও সভাপতি। সভা চলাকালীন ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের মাঝে বিষয়টি নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে অভিভাবক সদস্য খায়ের তালুকদার উচ্চ আওয়াজে বলেন, যদি এই দুই পদে উত্তীর্ণ ব্যক্তিদের কে নিয়োগ দেওয়ার রেজুলেশন করা হয়, সেই রেজুলেশন ছিড়ে ফেলা হবে। সেই ভয়ে সেদিনের সভায় নিয়োগের ব্যাপারে কোনো রেজুলেশন করা হয়নি
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য,আলমগীর হোসেন নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে, নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়েছিল। টাকা দেওয়া ব্যক্তিরা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়ায় তাদেরকে চাকরি দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। তাই পুনরায় আবার পরীক্ষার মাধ্যমে, টাকা দেওয়া ব্যক্তিদেরকে নিয়োগ দেওয়ার জন্যই এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ম্যানেজিং কমিটি। আয়া পদে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী অনুত্তীর্ণ হালিমা আক্তারের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়ে, অভিভাবক সদস্য আলমগীর হোসেন ও খায়ের তালুকদারের জড়িত থাকার সততা পাওয়া যায়।
নিয়োগের বিষয়ে অভিভাবক সদস্য খায়ের তালুকদারের সাথে কথা বললে তিনি জানান, পরীক্ষায় ঝামেলা হওয়ার কারণে পুনরায় আবার পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রেজুলেশন ছিঁড়ে ফেলা ও টাকা লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তিনি। অন্য আরেকজন সদস্য আলমগীর হোসেন এর সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।সভাপতি মোঃ কামরুজ্জামানের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, নিয়োগ পরীক্ষায় কিছুটা ত্রুটি বিচ্যুতি ঘটেছে। তাছাড়া উত্তীর্ণ ব্যক্তিদের আচার-আচরণে তাদেরকে যোগ্য মনে হচ্ছে না। এই পদে অধিক যোগ্য ব্যক্তির প্রয়োজন বলে মনে করছেন তিনি। একারণেই উত্তীর্ণ ব্যক্তিদের নিয়োগ পেন্ডিং রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে তৎকালীন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম জাহাঙ্গীর আলম জানান,কোনো প্রকার ত্রুটি বিচ্যুতি ছাড়াই সম্পূর্ণ সুষ্ঠু পরিবেশে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। উপজেলার বর্তমান মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম ফজলুল হক জানান, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি আংশিক জানেন, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে ডেকে এনে বিষয়টি সম্পর্কে কথা বলবেন বলে জানান তিনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহিনুল হাসান জানান, নিয়োগ পরীক্ষায় ত্রুটি বিচ্যুতি ঘটে থাকলে এর প্রমাণ থাকতে হবে। ত্রুটি বিচ্যুতির প্রমাণ হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ব্যক্তিদের আচার আচরণ খারাপ হলে, সে বিষয়ে ও প্রমাণ থাকতে হবে। ম্যানেজিং কমিটির কারো মনগড়া কথায় পরীক্ষা বাতিল করা যাবে না। অফিস সহায়ক পদে উত্তীর্ণ হওয়া রিমন ও আয়া পদে উত্তীর্ণ হওয়া শান্তা আক্তারের বাড়িতে গেলে তাদের স্বজনরা জানান, আজকে গরিব হওয়ার কারণে টাকা দিতে না পারায় চাকরিতে মেধার মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। পরীক্ষায় পাশ করেও, ম্যানেজিং কমিটি নিয়োগ না দেওয়ায় হতাশ হয়ে যায় দুটি পরিবার। এ নিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝেও চাপা খুব বিরাজ করছে। সাধারণ জনগনের সাথে কথা বললে নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে একাধিক ব্যক্তি বলেন, সভাপতি নিজেই গ্রামের শতশত লোকের সামনে পরীক্ষার পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। কিন্তু আজ তিনি ভিন্ন সুরে কথা বলছেন।