আবদুল আউয়াল সরকার :
মানবসেবায় এরই মধ্যে আলোচিত আমির হোসেন। ১৯৯৭ সালে কুমিল্লার চান্দিনার মেহারগ্রামে তার জন্ম। নিমসার থেকে পড়াশোনা শেষে পাড়ি জমান জাপান। পেশাগত জীবনটাও গড়ে তোলেন জাপানে। বিদেশ বিভূঁইয়ে হলেও মন পড়ে রয় তার দেশে। ২০১৩ সালে গড়ে তোলেন রংধনু ব্লাড ড্রাইভার্স। শুরুতে রক্ত দিয়ে সহযোগিতা করত এই ক্লাব। বর্তমানে বেড়েছে তাদের কার্যক্রম।
মানুষের জন্য জীবন
২০১৭ সালে উত্তরবঙ্গে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন। টিউবওয়েল দেন। বৈশ্বিক মহামারি করোনায় যখন মানুষ বিধ্বস্ত, সারা দেশে অক্সিজেন শূন্যতা চলছে, তখন তারা দিন-রাত অক্সিজেন নিয়ে ছুটে চলেন মানুষের দোরগোড়ায়। রাত যত গভীরই হোক, একটা ফোন পেলেই অক্সিজেন নিয়ে ছুটেছেন রংধনু। শুধু তাণ্ডই নয়, করোনার কঠিন দিনগুলোতে অসহায় মানুষকে খাদ্য, ওষুধ ও এবং নগদ অর্থও দিয়েছেন। অর্থাভাবে বিয়ে না হওয়া মেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থা করেন। শুধু নিজ জেলা কুমিল্লাতেই এমন মানবিক সেবা দিচ্ছেন না, দেশের অন্যান্য জেলায়ও মানুষের পাশে দাঁড়াতে শুরু করেন আমির হোসেন। ‘মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারলে আমার ভালো লাগে। অসহায় মানুষের মুখের হাসি আমাকে ভিন্ন রকম তৃপ্তি দেয়। আমি আমৃত্যু মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চাই।’ বললেন আমির হোসেন।
হুইলচেয়ার
প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ শুরু করেন ২০১৯ সালে। তাদের প্রয়োজন মতো সহযোগিতা করেন। কাউকে নগদ অর্থ দেন। কাউকে এক মাসের বাজার করে দেন। এ যাবত ৬২জনকে হুইলচেয়ার দিয়েছেন। মানুষকে ১৭টিউবওয়েল দেন। অসহায় নারীকে দেন সেলাই মেশিন। কুমিল্লা চান্দিনার এক অসহায় পরিবারকে ঘরও করে দিয়েছেন।
তাসফিয়া এখন সুস্থ
অসহায় ও অভাবী মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন আমির হোসেন। ওষুধ কিনে দেন। প্রয়োজনে অপারেশনের টাকাও দেন। তাসফিয়ার বয়স তখন পাঁচ বছর। তার হার্টে ছিদ্র দেখা দেয়। ভীষণ অভাবের সংসার। বাবার কাজ পড়ে গেছে। এদিকে তাসফিয়ার অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এক প্রতিনিধির মাধ্যমে আমির হোসেন তার খবর জানতে পারেন। তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তার বললেন, ‘অপারেশন করতে আড়াই লাখ টাকা লাগবে।’ আমির হোসেন ও তার সহযোদ্ধারা টাকা সংগ্রহ করা আরম্ভ করেন। ৪ লাখ টাকা হাতে আসে। তাসফিয়ার অপারেশন হয়। খরচ হয় আড়াই লাখ টাকা। বাকি টাকা তার মায়ের হাতে দেওয়া হয়। সে এখন সুস্থ। আগামী বছর বিদ্যালয়ে যাবে। তার মা বেশ খুশি হলেন। বললেন, ‘আমির বাবার কারণে আমার মেয়েটার মুখ আজ দেখতে পাচ্ছি। আল্লাহ তাকে দীর্ঘ হায়াত দিক।’ এমন গল্প আছে ইয়াসিনের বেলায়ও। ইয়াসিনের গলার সমস্যা দেখা দেয়। ডাক্তার বললেন, ‘অপারেশন ছাড়া সে বেশি দিন বাঁচবে না।’ আমির হোসেন তার দায়িত্ব নেন। তার চিকিৎসা করালেন। এবার খরচ হলো প্রায় ২ লাখ টাকা। এ টাকাও ফেইসবুকে পোস্ট করে সংগ্রহ করেছেন।
মাদ্রাসায় ছাত্রদের খাবার দেন
মাদ্রাসার এতিম ছাত্রদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিচ্ছেন আমির হোসেন। কাউকে প্রতি মাসে খরচের টাকা দিচ্ছেন। কারও পোশাক ও শিক্ষার উপকরণ দিচ্ছেন। আটটি মাদ্রাসায় ছাত্রদের একবেলা খাবার দিয়েছেন। সেখানে মোট ছাত্র ছিল ৯০০। খাবার দেওয়ার আগে ছাত্রদের চাহিদার কথা জিজ্ঞেস করেন। তাদের চাহিদা অনুযায়ী গরুর গোশত, বিরিয়ানি, মোরগ পোলাও ও খিচুরির ব্যবস্থা করেন। ছাত্ররা নিজ ইচ্ছেমতো যত খুশি খেতে পারে। আমির হোসেনের এ সেবাটি ধারাবাহিক চলছে।
কোরআন বিতরণ
মাদ্রাসা ও মসজিদে কোরআন শরিফ দিচ্ছেন আমির হোসেন। এ পর্যন্ত ১ হাজারের বেশি কোরআন দিয়েছেন। কোরআনের কথা শুনলে কালক্ষেপণ করেন না আমির। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা করে দেন। বললেন, ‘কোরআন হচ্ছে আমাদের পবিত্র ধর্ম গ্রন্থ। পৃথিবীর সেরা বই। কোরআনের খেদমত করতে পেরে যারপরনা-ই ভালো লাগে আমার।’
ঈদে পাঞ্জাবির পরিকল্পনা
অসচ্ছল ও দরিদ্র মাদ্রাসাগুলোতে কার্পেটের ব্যবস্থা করছেন আমির হোসেন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় অসহায় মানুষকে জায়নামাজও দিচ্ছেন। আসন্ন ঈদ উপলক্ষ্যে ১০০ এতিমকে নতুন পাঞ্জাবি কিনে দেবেন। ফান্ড গঠনও শুরু করেছেন।
স্বপ্ন ও মানবসেবার কারণ
বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা ও হাসপাতাল করার স্বপ্ন দেখছেন আমির হোসেন। হাসপাতালে অসহায় মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেবেন। এতিমখানায় বাচ্চারা পড়াশোনা করবে, থাকবে এবং তাদের উজ্জ্বল ভবিষৎ বিনির্মাণে কাজ করবে। আমির হোসেন বললেন, ‘মানুষের অসহায় মুখের ছবি আমার হৃদয়ে আঘাত করত। ছেলেবেলা থেকেই মানুষের জন্য কিছু করতে চাইতাম। মানবিক টান থেকেই অসহায়ের পাশে দাঁড়াই। আমার প্রবাসী বন্ধুরা আমাকে সহযোগিতা করেন। তাদের সহযোগিতা না পেলে এত কিছু করা সম্ভব নয়।’